পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে উন্নয়নের জোয়ার বইছে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

590

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ আত্মসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখন পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের কাজ সম্পন্ন করা গেলে এখানে উন্নয়নের কাজ আরো বেগবান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য এলাকার যেখানে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না সেখানে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছেঁ দিতে হবে। পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয় বা দূর্গমতার কারনে যেখানে বিদ্যুতায়ন সম্ভব নয় সেসব প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে ৭.৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুমুর রশিদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিঃ জেনারেল মাইনুর রহমান এফ ইউপি,পিএসসি, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের ভিসি প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙ্গামাটি জোন কমান্ডার মোঃ রফিকুল ইসলাম পিএসসি,এমএসসি,রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালুকদার, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান, রাঙ্গামাটি পৌরসভা মেয়র মোঃ আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান মহসীন রোমানসহ বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী বক্তব্যের পর রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কথা বলেন। এ সময় এক ছাত্রীর সাথে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে, কারন তোমরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় আবাসিক বিদ্যালয় করা হচ্ছে। এতে দুর্গম এলাকার ছেলেমেয়েরা এসব বিদ্যালয়ে অবস্থান করে পড়াশুনা করতে পারবে। সেজন্য তিন পার্বত্য জেলায় আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে সরকার। এসব কাজের খবরাখবর নিতে তিনি জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যালয় এবং , রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমের বিষয়ে খরবা খবর নেন। প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের ভিসি প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের সবকিছু তৈরী করে দ্রæত প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রস্তবানা পেলে একনেকের মাধ্যমে তা পাশ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশন পাওয়ার এর তত্ত¡াবধানে এ সৌর প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়।

কাপ্তাইয়ে সৌর শক্তির সাহায্যে সরকারিভাবে দেশের প্রথম সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। এ প্রকল্পের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ টাকা ৪৮ পয়সা।

এ বিষয়ে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশন পাওয়ার প্ল্যান্টটি নির্মাণ করছে। ২৪,০১২টি প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সোলার প্যানেলটি স্থাপন করা হয়েছে। এই ইউনিট থেকে ৭.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৬.৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা সোলার চালিত কেন্দ্রের জন্য সন্তোষজনক। এ প্রকল্প থেকে আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগামী দুই বছর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশন এটির দেখভালের দায়িত্বে থাকবে। দুই বছর এটি কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই ও লিচু বাগান পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের পর, অবশিষ্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী জলবিদ্যু কেন্দ্রের ম্যানেজার এটিএম আব্দুরজ্জাহের বলেন, ‘নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের ওপর ভাসমান আর ও ৫০ মেগাওয়াটের একটি সোলার প্যানেল বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭.৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। ৫০ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও সহায়তা দেবে এডিবি।