নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি : ৯ সেপ্টেম্বর পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস। এ দিন রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জা ইউনিয়ন এবং গুইলশাখালী ইউনিয়নের ৩৫জন কাঁঠুরিয়াকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল তৎকালিন শান্তি বাহিনী।
পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরের ন্যায় এবার দিবসটি পালন উপলক্ষে লংগদু উপজেলায় বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হবে বলে জানা গেছে।
৯সেপ্টেম্বর গণহত্যা থেকে সেদিন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ইউনুছ আলী নামের এক ব্যক্তি। মৃত্যুর কবল থেকে পালিয়ে বেঁচে আসা ইউনুছ আলীর জবানবন্দি থেকেই ৩৫ কাঁঠুরিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
সে দিন শান্তিবাহিনীর গণহত্যার শিকার নিরীহ কাঠুরিয়াদের পরিবারের আর্তনাদে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার পরিবেশ ভারী হয়ে আসে। এ গণহত্যায় কেউ হারিয়েছেন বাবা কেউ হারিয়েছেন স্বামী আবার কেউ হারিয়েছেন আদরের সন্তান।
মৃত্যুর কবল থেকে পালিয়ে বেঁচে আসা ইউনুছ আলীর জবানবন্দি বুঝা যায় ৯সেপ্টেম্বর পূর্বপরিকল্পিতভাবেই এসব নিরীহ ৩৫ কাঠুরিয়াদের হত্যা করা হয়েছিল।
৩৫ কাঁঠুরিয়ার ওই দিন শান্তিু বাহিনীর বার্তা সহজে বুঝতে পারেনি। ওই দিন ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বর্ণনায় জানা যায় – পাকুয়াখালীতে তৎকালিন শান্তি বাহিনীর লিডার কাঁঠুরিয়াদের মধ্যে সংবাদ পাঠিয়েছেন যে, শান্তি বাহিনীর বড় বাবু কাঠুরিয়াদের সাথে কথা বলবেন। সেদিন সকালে পাখুয়াখালীতে বড় বাবুর ডাকে দেখা করতে যায় কাঠুরিয়া। সেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসেনি, ফিরে এসেছে ৩৫ কাঠুরিয়ার ক্ষত বিক্ষত লাশ।
বেচেঁ থাকা ইউনুছ আলীর বিবরনে জানা যায়, ৩৫জন কাঠুরিয়ার সবাইকে গহীন জঙ্গলে নিয়ে হাত পা বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে পাহাড়ের নিচে দেয়। যার গভীরত্ব ২-৩শ’ ফুট বলে জানা যায়।
নিহত কাঁঠুরিয়া মোস্তফার মা বলেন, পাকুয়াখালী হত্যার দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলে ও ্ এ গণহত্যার কোন বিচার এখনো হয়নি।
৪০ বছর পরে যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে পারে তা হলে ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বিচার হবে না কেন? তিনি অশ্রæঝড়া কন্ঠে বলেন, সরকার ২বার ক্ষমতায় আসার পরও ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বিচার নিয়ে কোন প্রকার কর্ণপাত করছে না। তাই সরকারের কাছে দাবি বিচার বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। আর যাদের আত্বীয়স্বজন হারিয়েছে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান সরকারের প্রতি।
এদিকে গুইলশাখালীর নিহত শরীফ উদ্দিন কাঁঠুরিয়ার ছেলে সাখাওয়াৎ হোসেন ও আরেক নিহত কাঁঠুরিয়া কালাপাকুজ্যা রহমতপুর এলাকার হেলাল উদ্দিনের বড় ভাই করিম বলেন, আমরা স্বজন হারিয়েছি ২১ বছরের বেশী অতিবাহিত হলো কিন্তু স্বজনহারা লোকদের কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি খুন গুম অপহরণ হলে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
বাঙালি হত্যা হলে দাতাগোষ্ঠি ও মানবাধিকার ঘুমে থাকে, এ বিষয়ে তারা কোন কথা বলেন না।
তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি, খুন, গুম মুক্তিপণ বানিজ্যও অপহরণ বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।
পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস নিয়ে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসকে ঘিরে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে।
পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসে পার্বত্য ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ৩৫ বাঙালি কাঁঠুরিয়া হত্যাকান্ডসহ পার্বত্যাঞ্চলের সকল হত্যা কান্ডের বিচার করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।