প্রবল বর্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি

348

ডেক্স রিপোর্ট, পাহাড়ের আলো ডট কম : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও সীমান্ত থেকে নেমে আসা প্রবল পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনো অভ্যন্তরীন সড়কের যানবাহন চলাচল এখনো শুরু হয়নি। রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় রাস্তার বিশাল ভাঙ্গনের ফলে রাঙ্গামাটি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এদিকে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় চার ২ লাখেরও বেশী মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। গত কয়েক দিনে তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধ্বস ও পানিতে ভেসে গিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে যাওয়ায় সাজেক ভ্রমনে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে।

কর্ণফুলীর শাখা কাচালং, মাইনী, চেঙ্গী ও রাইংক্ষিয়ং নদীতে প্রবল বেগে পাহাড়ী ঢল নেমে আসায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ্্ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পাহাড়ী ঢলে প্রবল ¯্রােতের কারনে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর জুরাছড়িতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে ৯৮ এম এস এলে (মীনস সী লেভেল) অবস্থান করছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র জানিয়েছে কাপ্তাই হ্রদের প্রতিনিয়ত পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ মেগাওয়ার্টে দাড়িয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন কক্ষ জানায়, ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। চার উপজেলায় ২শত আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা দূর্গত দেড় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন থেকে আশ্রয় কেন্দ্রের লোকদের খাবার দেয়া হচ্ছে।

দুই দফায় পাহাড় ধ্বসে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই ও রাইখালীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৫ জন। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে পাহাড়ী ঢলে নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ জুলাই পানির তোড়ে ভেসে গেলে গতকাল আলো বিকাশ চাকমা (২৮) এর লাশ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে গত ১২ জুলাই দুরছড়ি এলাকায় কুয়াশা চাকমা (১৩) নামে এক কিশোরী গোসল করতে নামলে পানিতে ভেসে যায়। গতকাল বিকালে মাইনী নদীর বড় দুরছড়ির নদীর মাঝখানে কুয়াশ চাকমা লাশ ভেসে থাকতে দেখে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৪ জুলাই রবিবার রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলায় হ্রদে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত নামা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির জেলা সদরের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি ঘটলেও জেলার দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। রবিবার সকালে দীঘিনালায় পানি কিছুটা কমতে দেখা গেলেও বৃষ্টি বাড়ার কারণে নতুন করে মাইনী নদীতে পানি বাড়ছে।

গত কয়েকদিন ধরে দীঘিনালা উপজেলার মেরুং বাজার, চিটাগাং পাড়া, সোবহানপুর, হাজাছড়া এলাকায় প্রায় ৪শ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এখনো রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সাথে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে খাগড়াছড়ির গ্রামীন সড়ক, কালভার্ট, ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ায় পাহাড় ধস ও বন্যার আশঙ্কায় রাঙ্গামাটির সাজেক সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে সর্তকতা জারি করে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন।

তবে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, যে কোন ধরণের দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। পানিবন্দি মানুষদের সাহায্যর্থে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ৫০ মেট্রিক টন চাউল বিতরণ করা হয়েছে।
গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়ি সদরের মুসলিমপাড়া, মধুপুর বাজার, গন্জ পাড়া, জিরোমাইল, পানছড়িসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গ্রামীণ সড়ক, কালভার্ট ও কৃষি জমির চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, টানা নয়দিনের প্রবল বর্ষনের কারনে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারনে জেলা সদরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর,বালাঘাটা আম বাগান, বাসস্টেশন ছাড়াও লামা, আলীকদম, রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টির কারনে ফের পানি বাড়তে শুরু করেছে।

প্রবল বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন নিচু এলাকায় পানি জমে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ, আর বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে এদের অনেকেই।

এদিকে বান্দরবান কেরাণীহাট সড়কের বাজালিয়ার বড়দুয়ারা এলাকায় সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে গত মঙ্গলবার থেকে ৫ম দিনের মতো বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বান্দরবানের বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ ঝন্টু জানান, বান্দরবান কেরানিহাট সড়কের বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক থেকে পানি নামলেই সরাসরি বাস চলাচল শুরু হবে।

বন্যায় দুর্গতদের জন্য জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৩৩টি। আশ্রয় কেন্দ্রলোতে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।