টানা বর্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছাড়তে জেলা প্রশাসকের আহবান

412

 

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি : গত তিন দিনের টানা বর্ষণের কারনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি শহরের পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় বসবাসকারী সকল জনগনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদ। শহরের বিভিন্ন ঝুকিপুর্ণ পয়েন্টে গিয়ে জেলা প্রশাসক জনগন সাধারনকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। জনগনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ২১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলো হয়েছে।

এছাড়া রাঙ্গামাটিতে প্রবল বর্ষন শুরু হওয়ার পর থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় অথবা জেলা প্রশাসনের খুলে দেয়া আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে চলে যেতে বলা হয়েছে। জনগনকে সচেতন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের দূর্যোগরে কথা মাথায় রেখে রাঙ্গামাটি শহরের ৬ নং ওয়ার্ডকে বেশী দূর্যোগ পূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ডের মনোঘর, যুব উন্নয়ন এলাকা, শিমুলতলী, ভেদেভেদী, সনাতন পাড়া, লোকনাথ মন্দিরের পেছন সাইড, রূপনগর, আরশি নগর, টিভি সেন্টার এলাকা, আউলিয়া নগর সহ বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম। স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন কমিটি পৌর কাউন্সিলারদের তত্ত্বাবধানে এলাকা গুলো থেকে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে।

এ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রবিবার দূর্যোগ মনিটরিং বিষয়ক সভা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস,এম শফি কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা শারমিন আলম, রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার, রাঙ্গামাটি পৌরসভার কাউন্সিলার, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাফুজ আলম, রোভার স্কাউট সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল আবছার ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙ্গামাটি পৌর শহরে ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য খোলা থাকবে, এছাড়া ৬ নং ওয়ার্ডের যে সকল সরকারী অফিস রয়েছে তাকেও আমরা আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করে রেখেছি। এই নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে মোট ২১ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া ১০ উপজেলায় বিভিন্ন স্কুলেও আশ্রয় কেন্দ্র খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙ্গামাটি পৌসভার সহ ১০ উপজেলায় মোট তিন হাজার ৩৭৮ টি পরিবারের প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশী মানুষ ঝুকিতে আছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসদরে ৯ টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩৮ টি স্থানে ৭ শতাধিখ পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের শিমুলতলী, রূপনগর, আউলিয়া নগর, মনোঘর, মুসলিম পাড়া, পোষ্ট অফিস কলোনী, নতুন পাড়া, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দিরে এলাকা, সনাতন পাড়া, ৭ নং ওয়ার্ডের কলেজ গেইট, কাদেরিয়া মার্কেট এলাকা, রাজবাড়ী এলাকা, ১ নং ওয়ার্ডের চেঙ্গীমুখ, চাম্পানিমার টিলা, ২ নং ওয়ার্ডের এসপি অফিস সলংগ্ন, পুরাতন বাস ষ্টেশন, মাতৃমঙ্গল এলাকা। এছাড়া রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের সব কয়টিই ঝুকিপূর্ণ। এ ইউনিয়ন গুলো মধ্যে ৭৫০ টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক পাহাড়ের ঢালে ঝুকিতে বসবাস করছে।

এদিকে রাঙ্গামাটি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় জনৈক ব্যক্তি কাদেরিয়া বিল্ডিং সব চেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই বিল্ডিং এর নীচু এলাকায় প্রায় অর্ধশত পরিবার বসাবাস করে। বিল্ডিং এর পিলারের গোড়ার মাটি খয়ে গিয়ে ঝুকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্যোগে নেমে আসতে পারে ঐ এলাকায় স্থানীয় পরিবার গুলো জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুন থেকে টানা বর্ষণের ফলে ১৩ জুন রাঙ্গামাটি জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্য সহ ১২০ জন নিহত হয়। ২০১৮ সালের ১১ জুন নানিয়ারচর উপজেলায় পহাড় ধ্বসে মুত্যু হয় মোট ১১ জনের।