প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ !!

1026

নিজস্ব প্রতিবেদক,বরকল : রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ কাগজে কলমে ঠিক থাকলেও বাস্তবে তার সিঁকি ভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে সরকারের বরাদ্দকৃত এসব অর্থের সঠিকভাবে বিদ্যালয়ের কোন কাজে প্রয়োগ হয়নি বলে অনেকের অভিযোগ। সরেজমিনে এসব কাজের তদন্তের দাবী অনেকের।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে উপজেলার ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লীপের (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) খাতে প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০থেকে ৫০হাজার করে ৩২লক্ষ ৮০ হাজার টাকার অধিক। ৩৮টি বিদ্যালয়ে রুটিন মেইনন্টেন্যান্স খাতে প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০হাজার টাকা করে ১৫লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ২১টি বিদ্যালয়ে মাইনর মেরামত খাতে ২লক্ষ টাকা করে ৪২ লক্ষ টাকা আর ৫টি বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে প্রতি বিদ্যালয়ে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে মেরামতে বিভিন্ন খাতে ৯৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সরকারি ভাবে ববরাদ্দ দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে চলতি অর্থ বছর মানে ৩০জুন শেষ হলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোন কাজ না করে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বরাদ্দের টাকা গুলো উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ও হিসাব রক্ষন অফিসের মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দকৃত এসব অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য স্লীপ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান্ট) রুটিন মেইনন্টেন্যান্স, মাইনর মেরামত ও রাজস্ব খাতে ৯৭লক্ষ ৫০ হাজার টাকার অধিক চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দ দেয়া হয়।

 

উপজেলার শিক্ষা কমিটির স্মারক নং- ৩৮.০১.০০০০.১৫২.০২০.১০.২০১৮(অংশ-১)-৯৫৬/২৮৭ আর ৩৮.০১.০০০০.৭০০.১৪.০১৭.১৮.২৪১/৫৮০ এর নির্দেশনা রয়েছে ১৩. ০৬. ২০১৯ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে এলজিইডি প্রাক্কলন তৈরী করে ১৭ জুনে কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আর্থিক ফান্ড থেকে ৫০% কাজ করার পর কমিটির রেজুলেশন সহ বিল ভাউচার করে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দেবে।

এর পরে উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রতিনিধি বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিদর্শন শেষে কাজের উপর প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদনের উপর শিক্ষা কর্মকর্তা অথবা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে কাজের অগ্রগতি ও গুনগত মান যাছাই করে যতোটুকু কাজ হয়েছে তার বিল ছাড় দেবেন। এরকম নিয়মের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলে ও তা করা হয়নি।

চলতি অর্থ বছরের জুন ক্লোজিংয়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা কিন্তু জুন মাস শেষ হওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান পাটোয়ারী বরাদ্দের টাকা ছাড় দিয়েছেন। এতে দেখা গেছে যে বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ টাকা অথবা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানে টাকা পেয়েছে মাত্র ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।

আর যে বিদ্যালয়ে ৪০হাজার টাকা সেখানে দেয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বরাদ্দের বাকি টাকা গুলো ভ্যাট কর্তন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

এ বিষয়ে বরকল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোজ চাকমা বিরো জানান, গত অর্থ বছরে তার বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য ১লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই বরাদ্দ পেতে তাকে ২০হাজার টাকা খরচ দিতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নেতা জানান, চলতি বছরের বিদ্যালয় মেরামতের বরাদ্দ ছাড়া ও ৮২টি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের খেলাধুলা ও শিখন সামগ্রী ক্রয় করার জন্য ১০হাজার টাকা করে দেয়া হয়। ওই টাকা থেকে শিক্ষা অফিসে ১হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে প্রতি বিদ্যালয় থেকে। এ ছাড়া ও বিদ্যালয়ের বিপিএড পাস করা শিক্ষকদের বেতন স্কেল পরিবর্তন করতে প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা। আর অভ্যন্তরীন বদলীর প্রস্তাব দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষক কে ৫ থেকে ১৫হাজার টাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষক নেতার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিরালা কান্তি চাকমাা জানান, বিদ্যালয় গুলোর মেরামতের ব্যাপারে তিনি কোন কিছু জানেন না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে জানেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অবগত আছেন বলে সহকারি কর্মকর্তা জানান।

এসব অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হান্নান পাটোয়ারী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। শিক্ষা অফিসের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। বিদ্যালয় গুলোর মেরামতের কাজ নিয়ম মেনে করা হয়েছে বলে জানান এই প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন, চলতি অর্থ বছরে বিদ্যালয় গুলোর সংস্কার বা মেরামতের জন্য যে বরাদ্দ এসেছে তা সংশ্লিষ্টরা জানেন। তবে বিদ্যালয়গুলোর মেরামতের কাজ হয়েছে কিনা তা সরেজমিনে দেখা হবে এবং কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।