কর্ণফুলী পেপার মিলের জটিলতা শেষ হবে কবে ??

872

ডেক্স রিপোর্ট, পাহাড়ের আলো ডট কম : পুরাতন যন্ত্রপাতি মিলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহেলা, কাঁচামাল সংগ্রহে জটিলতা ও বেতন ভাতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ের অসন্তোষের কারণে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) প্রতিষ্ঠান এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)।

সঠিক দিক নির্দেশনা ও নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা গেলে এই মিলের উৎপাদন আগের মতো আসবে বলে মনে করছে মিলের প্রাক্তন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং অভিজ্ঞ মহল। এদিকে আগামী ৬ জুলাই শিল্পমন্ত্রী মিল পরিদর্শনে আসার কথা থাকায় শ্রমিকদের মাঝে আবারো আশার সঞ্চার হয়েছে।

এই নিয়ে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার কয়েকবার সংসেদ উত্থাপন ও শিল্পী মন্ত্রনালয়ের সাথেযোগাযোগ ও শিল্প মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে মিলকে কিছুটা বন্ধের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাগজ উপাদনের মিল কেপিএমের সমস্যার মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মত পরিশোধ, পুরাতন যন্ত্রপাতি বদলে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন ও অর্থ সংকটে কাগজ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বাঁশ, পাল্পউড এবং রাসায়নিক সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসন করা গেলে এটি দেশের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিণত হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান কয়েকশো কোটি টাকা অবসরে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীদের অনেক পাওনা ও বকেয়া রয়েছে। কাঁচামাল ও বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে ঠিকাদার ও সরবরাহকারীরা পাওনা রয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। এত বড় অঙ্কের পাওনা পরিশোধ এবং নতুন করে অর্থ যোগান দিয়ে কারখানাটিকে সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। লোকসানের মধ্যে থাকায় ঠিকাদাররাও কাঁচামাল সরবরাহে আগ্রহ হারিয়েছেন।

এ নিয়ে বিসিআইসি’র পক্ষ থেকে দফায় দফায় বরাদ্দ দিয়েও কারখানাটিকে লাভজনক করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ হাজার মেট্রিক টন কাগজের উৎপাদন কম হয়। কেপিএম বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় বিচলিত সেখানে কমর্রত বর্তমান শ্রমিক-কর্মচারীরা।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানটির ভঙ্গুরদশা থেকে মুক্তি দিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যর একটি টিম কেমিএম পরিদর্শন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ওই এলাকায় নতুন করে আরেকটি মিল প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু বছর চলে গেলেও এর কোনো সুফলতা দেখতে পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

শ্রমিক-কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আবদুল রাজ্জাক জানান, কেপিএম এখন ধ্বংসের পথে। প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাওয়ার কোন অবস্থা নেই। বর্তমানে ৩০০ জন স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। উৎপাদন না থাকায় তাদের দু’মাসের বেতন বন্ধ।

কারখানার মেশিন (টারবাইন) চালানোর জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০ টন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। মাসে খরচ পড়ে দেড় কোটি টাকার মতো। কিন্তু খরচের তুলনায় কাগজ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কারণ কাগজ উৎপাদন করার জন্য যেসব আধুনিক মেশিনারিজ দরকার হয় তেমন মেশিন এ প্রতিষ্ঠানে নেই। পুরনো আমলের যে মেশিনগুলো আছে তা সংস্কার না করার কারণে নষ্ট হওয়ার পথে। আর যেগুলো আছে তা দিয়ে পরিমাণ মতো কাগজ উৎপাদন সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, মূলত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অর্থ বিনিয়োগ না করায় প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের মুখে। কর্তৃপক্ষের সুনজরে এলে কেপিএম হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এমএম কাদেরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে এক লাখ ২৬ হাজার একর জায়গা জুড়ে কেপিএম প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৫৩ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। মিলটি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতায় ছিল আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালি। ব্যবস্থাপনা ক্রুটির কারণে শুরুতে এটি সফলতা পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৯৬৪ সালে এর মালিকানা হস্তান্তরিত হয় পাকিন্তানের ‘দাউদ গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র কাছে। গ্রæপটি তখন কারখানার আধুনিকায়ন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বিসিআইসি’র অধীনে প্রতিষ্ঠানটি ন্যস্ত করে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে দাউদ গ্রæপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মামলা চলছে। কর্ণফুলী পেপার মিল। পার্বত্য এলাকায় বনজ কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকায় অল্প সময়ে লাভের মুখ দেখে কেপিএম। এ লাভের টাকায় সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কর্ণফুলী রেয়ন মিলস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের তিনটি ইউনিটে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১০ থেকে ১৩০ মেট্রিক টন। লাভের ধারাবাহিকতা ২০০১ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। কিন্তু ২০০১ পরবর্তী সময়ে নানামুখী দুর্নীতি ও অনিয়মে কেপিএম লোকসানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

( দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক, এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের লেখা থেকে নেয়া- তারিখ ৩-৭-১৯ইং )