বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি : বাঘাইছড়ি উপজেলায় এলজিইডির ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তার কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে ঠিকাদার জুন ফাইনালের আগে লোকাল বালু, পাথর ও মাটি দিয়ে কাপেটিং রাস্তার কাজ শেষ করতে যাওয়ায় স্থানীয়রা অভিযোগ তোলে। দ্রুত গতিতে এই কাজ বন্ধ করে না দিলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
এই সড়ক পথটি সারোয়াতলী ও আমতলী ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক পথ। উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র এই সড়ক পথটি এলাকাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সরকার সড়কের কার্যাদেশ দিলে এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১.৬৬ থেকে ৫.৪ কিলোমিটার সড়ক পথের কার্পেটিং কাজের শুরু হয় কিছুদিন আগে থেকে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে কাজে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনসাধারন। যানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কতৃক ২০১৯/২০২০ অর্থ সালের এই টেন্ডার কাজে প্রায় তিন কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে বাঘাইছড়ি নামক এলাকার তালুকদার পাড়া হতে রাবার বাগান এলাকা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর কতৃক এই কাজ বাস্তবায়নে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে ইউটিমং নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। এ প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করছে রাঙ্গামাটির জনৈক জসীম উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার নিম্নমানের পাথর, বালু ও ভিটুমিন ব্যবহার করাসহ সড়কে পরিমাপ অনুযায়ী কংক্রিট ও বালু ফিলিং না করে পাহাড়ের মাটি দিয়ে বালু ফিলিংয়ের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করছে। এছাড়া ও বর্তমানে কার্পেটিং কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে খুব নিম্নমানের বিটুমিন।
সঠিক পরিমান ভিটুমিন মিক্সার না করেই কার্পেটিং এর কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা ।
তবে স্থানীয় এলজিইডি তদারকি কর্মকর্তাদের বারংবার অনিয়মের অভিযোগ তুলে ও কোন লাভ হচ্ছেনা বলে সংবাদকর্মীদের জানান ঐ এলাকার ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগন। এলাকাবাসীর দাবী নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কার্পেটিংয়ের কারনে যেকোন সময় রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল হক তালুকদার বলেন, কাজের শুরু থেকেই এই অনিয়মের কথা ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারকে বললে ও তারা কোন কর্ণপাত করছে না। তিনি এই কাজের সঠিক তদারকির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় লোকজনের চলাচলের জন্য এই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দেন দরবার করে জনগনের উপকারের জন্য রাস্তা নিয়ে আসবো আর অফিসের সাথে যোগ সাজসে ঠিকাদাররা অবৈধ ভাবে কাজ করে লাভবান হবে এটা ঠিক না। তিনি এই কাজের সঠিক তদারকির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আমরা বেশ কয়েকবার ঠিকাদারকে বলেছি এবং ইঞ্জিনিয়ারকেও বলেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা কোন কর্ণপাত করেনি।
এব্যাপারে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে অবহিত করলে তিনি লোকবলের অভাব তাই ঠিকাদাররা দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে বলে দাবি করেন। তিনি প্রতিবেদকের সামনেই ঠিকাদারকে ডেকে নিম্নমানের বিটুমিন সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন এবং অবৈধ কাঠ না পুড়িয়ে বাতিলপূর্বক জুট পড়ানোর নির্দেশ দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ এর ভিত্তিতে সরেজমিনে কাজের স্থানে গেলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় এবং নিম্নমানের কিছু বিটুমিন ড্রাম পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে লুকায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিম্নমানের কাজ ও ভিটামিন ব্যবহারের বিষয়ে ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাকে জঙ্গলে লুকায়িত বিটুমিন এর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন এগুলি ইঞ্জিনিয়ার দেখেছে এই ভিটুমিনগুলো কাজের ষ্টিমিটে ধরা রয়েছে। তাই আমরা এগুলো দিয়ে কাজ করছি। কাজের স্টিমিট দেখতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন স্টিমিট দিয়ে ঠিকাদারি করবেন কিনা?
তবে চলমান এ কাজে দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরেক ঠিকাদার মোঃ জসিম উদ্দিন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী বলেছেন, কাজের বিষয়ে খোজ নিতে গেলে জসীম উদ্দিন বারবার দলীয় প্রভাব দেখায় এবং বলেন আমি সরকার দলীয় লোক। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে জসীম উদ্দিন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলে যোগ দিয়ে দেনদরবারের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের কমিটিতে স্থান করে নিলে ও বাস্তবে সে দলের দুঃসময়ের কোন কর্মী নয় বলে জানান রাঙ্গামাটির অনেক স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে তার দলে আগমন বলে জানান অনেকেই।
এদিকে স্থানীয সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি জেলার শত কোটি টাকার কাজের অনিয়মি ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদ স্থানীয সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির বিভিন্ন কাজের অনিয়মের কথা তুলে ধরে কাজ গুলো দ্রুত ঠিক করে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা প্রদান করলে ও বাস্তবে এর কোন ফলাফল মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
শুধু বাঘাইছড়ি নয় লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা এলাকায় এলজিইডির প্রায় ৫ কোটি টাকার কাজ করার আগেই ভেঙ্গে গেছে। রাঙ্গামাটির কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার ইতিমধ্যে কাজের বিল তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।