নিজস্ব প্রতিবেক, রাঙ্গামাটি – পাহাড় ধসের ২বছর পেরিয়ে গেলে ও রাঙ্গামাটির মুল সড়কের রাস্তাগুলোর বেহাল দশা এখনো বিদ্যমান। ২০১৭ সনের ১৩ জুন পাহাড় ধসের পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য সরকারীভাবে যথেষ্ট পরিমান বরাদ্দ দেয়া হলে ও রাস্তা সংস্কার কাজে স্থায়ী কোন সমাধান পায়নি রাঙ্গামাটিবাসী।
বর্ষা মৌসুমে কোনরকমভাবে সড়ক সংস্কারের কাজ করায় সেসব রাস্তা বর্ষা আসলে আবারো ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। পাহাড় ধস পরবর্তী জরুরী ভিত্তিতে রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে সড়ক সচল করতে ব্যয় করা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের মাধ্যমে স্থায়ী রক্ষাপদ কাজ করার কথা থাকলে ও এবার আবারো প্রায় কোটি ব্যয়ে গাছের বল্লি/খুটি দিয়ে মুল সড়কের পাশে পাইলিং কাজ করা হচ্ছে।
এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা গেলে ও রাঙ্গামাটির মুল সড়কগুলোর সুষ্ঠুভাবে মেরামত বা সংস্কার বলে স্থায়ী কোন সমাধান বা কাজের মত কোন কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ সাধারন জনসাধারনের। এতে বর্ষায় জনগনের আতংক যেমন কাটছে না, তেমনি সরকারের কোটি টাকার বরাদ্দ অনেকটাই অপচয় হচ্ছে ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো তাৎক্ষণিক সাময়িক মেরামত কাজ করা হয়েছিল গাছের খুঁটির পাইলিং দিয়ে আর মাটির বস্তা ভরাট করে।
২০১৭ সালের পাহাড় ধস পরবর্তী করা এসব কোটি টাকার সংস্কার কাজগুলোর অনেকটাই এরই মধ্যে ধসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে ওইসব পাইলিং। ফলে আবার বেহাল দশায় ঝুঁকিতে সড়কগুলো। তৈরি হয়েছে, এসব সড়ক যে কোনো ভেঙে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা।
এখন আবার শুরু হয়েছে বর্ষা। এ অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিভিন্ন আভ্যন্তরীন সড়ক মেরামত ও পাহাড় ধবসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে মেরামত করতে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার আবারও অস্থায়ী মেরামত কাজ করা হচ্ছে। শুধু গাছের খুঁিট দিয়ে ঝুকিপূর্ণ সড়কগুলো সাময়িক মেরামত কাজে দুই কোটি খরচ করছে, রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ রাঙ্গামাটি মুলসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক সংস্কার নিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কেএম মামুনুর রশীদ বলেন, সড়কের দুই পাশে গাছের খুঁটি দিয়ে যেসব পাইলিং কাজ করা হয়েছে, এগুলো অযথা।
বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছের খুঁটির পাইলিং ভেঙে যাবে। এগুলো কোনো কাজে আসবে না। তারপরও বর্ষায় সড়ক সচল রাখতে ব্যবস্থা নিতে সড়ক জনপথ বিভাগ ও এলজিইডিকে বলা হয়েছে।
তথ্যসূত্র মতে, ওই দুর্যোগের পর এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কেবল সাময়িক সংস্কার কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। তখনও বেশিরভাগ স্থানে গাছের খুঁটি দিয়ে করা হয়েছে পাইলিং কাজ।
এ ছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবনে নির্মিত অস্থায়ী বেইলি সেতুতে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। অনেকের মন্তব্য, ওইসব টাকা ব্যয় করা হয়েছে অযথা। ওইসব সংস্কার কাজে সড়কগুলোর কোনটারই স্থায়িত্ব বেশী দিন হয়নি।
এরপরও আবার অযথা দুই কোটি টাকা খরচ করে গাছের খুঁটি গেড়ে সড়কগুলোর মেরামত কাজ করছে সরকারের রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
বর্তমানে চলমান এসব সংস্কার কাজে দুই কোটি টাকা বরাদ্দের ছাড় করা হলে ও এসব সংস্কার কাজে অর্ধেক টাকা ও খরচ করা হবে না অনুমেয়। এসব সংস্কার কাজ প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি হল- ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স ও এস অনন্ত ট্রেডার্স। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে রাঙ্গামাটির মুল সড়কের বিভিন্ন স্থানে বল্লি বা খুটি দিয়ে এসব পাইলিং কাজ করা হচ্ছে। ১০ গ্রæপে ভাগ করে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আটটি স্থানে এসব কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়কে নামে মাত্র গাছের বল্লী দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা সংকটের সুযোগে নামে মাত্র অনেকটা তাড়াহুড়ো করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অনেক ঠিকাদার।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩১ স্থানে বড় ধরনের ভাঙন ও গর্তের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও শহরের মধ্যে ৮ স্থানে ভাঙন ও গর্ত হয়েছে। মূল শহরসহ গোটা রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ভাঙন ও গর্ত হয়েছে মোট ৩৯ স্থানে।
সেগুলোর সাময়িক মেরামত কাজ করা হয়েছে গাছের খুঁটি গেড়ে পাইলিং দিয়ে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কেবল রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩১ স্থানে ভাঙন মেরামত কাজে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং ও মাটি ভরাট করতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
আর শহরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ স্থানে ভাঙন মেরামত কাজে ব্যয় হয়েছে ৫১ লাখ টাকা। এছাড়াও বিলীন হওয়ায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবনে অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি অস্থায়ী বেইলি সেতু। সেখানে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
অনেকের মন্তব্য, স্থায়িত্ব না হওয়ায় ওইসব কাজে যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে, সেগুলো অযথা। পরে বৃষ্টিতে ওইসব গাছের খুঁটির পাইলিং ও মাটি সরে সব ভেঙে গেছে। এরপরও আবার গাছে খুঁটি গেড়ে পাইলিং দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে, রাস্তার ওইসব স্থান। ফলে একইভাবে কিছু দিনের মধ্যেই ভেঙে ধসে যাবে গাছের খুঁটির পাইলিং।
সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কটি যাতায়াত ও যান চলাচলে মোটেও নিরাপদ নয়। সড়কের দুই পাশে যে ৩১ স্থানে ভাঙন হয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত রয়ে গেছে, সেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ছাড়াও পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত সড়কের মধ্যে ১১৫ স্থানে ভাঙন ও গর্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এসব সড়কের মধ্যে রয়েছে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক।
এসব সড়কে গাছের খুঁটি দিয়ে করা পাইলিং ও মাটি ভরাট কাজ একটি সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট চক্র ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এবারও একইভাবে দুই কোটি টাকার ১০ গ্রæপের পাইলিং কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, এখানে কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। রাঙ্গামাটিতে যে কোনো উন্নয়ন কাজে সমন্বয় থাকলে দ্রæত যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারত।
এখানে যে যার যার ইচ্ছামফিক কাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, গণপূর্ত, এডিবিসহ বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। তারা সমন্বয় করে কাজ করলে এসব সমস্যার দ্রæত সমাধান সম্ভব হতো তারা উল্লেখ করেন।
এসব বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টির সব দায়-দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেন, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত।
তিনি বলেন, এসব কাজ নিয়ে তার পক্ষে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। কাজের সবকিছুর দায়িত্বে খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজেই যা বলার তিনি-ই বলবেন।
যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মো. ফয়সাল জানান, এবার বর্ষায় ভাঙন রোধে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী মেরামত কাজ চলছে।
এসব কাজে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের ছাড় পাওয়া গেছে। এসব কাজের মধ্যে গাছের খুঁটি দিয়ে অস্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধে ধারক পেলা সাইডিং বা পাইলিংয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ হচ্ছে।
তিনি বলেন, কাজ দ্রæত শেষ করার চেষ্টা চলছে। কাজে কোনো রকম ত্রæটি বা অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নই। কারণ আমাকে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই কাজের তদারকি করছি মাত্র। তবে কাজ যাতে ভালোভাবে হয়, সেদিকটা লক্ষ্য রাখছি। তবে কাজের মানের বিষয়ে নানারকম প্রশ্ন থাকলে ও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।