৭২ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন রাঙ্গামাটির ৩ উপজেলা, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস বিদ্যুৎবিভাগের

502

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি – ৭২ ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই রাঙ্গামাটির বরকল জুরাইছড়ি ও বিলাইছড়ির তিন উপজেলায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই তিন উপজেলার হাজারো মানুষ। বিশেষ করে সমস্যা হচ্ছে স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের। বিদ্যুৎ না থাকায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কেরোসিনের বাতি অথবা মোবাবাতি জ্বালিয়ে কোন রকম চালিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা। অন্যদিকে বিদ্যুতের সমস্যার কারনে সাধারন হোটেল ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।

অভিযোগ রয়েছে সামান্যতম বৃষ্টি বা ঝড়ো বাতাস হলেই এ তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ থাকেনা। আবার প্রায় সময় যান্ত্রিক ক্রটির কারনে তিন পেইজের বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে এক পেইজে থাকলেও দুটি পেইজে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকেনা।

এছাড়া ঘন ঘন লোড শেডিং ও লো- ভোল্টেজের কারনে অতিষ্ঠ সাধারন গ্রাহকরা। বিদ্যুতের এসব সমস্যার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরে ও এসব সমস্যার সমাধান না হওয়াতে বর্তমান এমন পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এউ তিন উপজেলার ভূক্তভোগী গ্রাহকদের।

এ তিন উপজেলায় বিগত ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ কেভি বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন দেয়া হয়।

জুরাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা ও বিলাইছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনির্মল দেওয়ান বলেন, তাদের উপজেলায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এ দু উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার গ্রাহক চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

বরকল উপজেলা বিদ্যুৎ গ্রাহক উন্নয়ন সমিতির আহবায়ক মোঃ আবু বক্কর ও বড় হরিনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা জানান, বরকল ও জুরাইছড়িতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লাইন ম্যান থাকলেও বিলাইছড়িতে এখনো পর্যন্ত কোন লাইনম্যান নিয়োগ দেইনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ।
ফলে বিলাইছড়ি থেকে ফিউজ কেটে গেলে সেটা না লাগালে জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিলাইছড়িতে কোন কর্মচারী না থাকায় ফিউজ কেটে গেলে প্রায় সময় ফিউজ লাগানোর মানুষ থাকেনা। এখানে ফিউজ লাগালেই বরকল জুরাইছড়ি গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সংযোগ পায়। আর না লাগালে অন্ধকারে থাকতে হয়। এ দূটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ আসার পর থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান মজিদ জানান, কাপ্তাই লিচু বাগান ও চন্দ্রঘোনা এলাকায় ৩৩কেভি লাইনটির যান্ত্রিক ক্রটি হওয়ায় তিন উপজেলায় আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজ চলছে। যতো দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

ঘন ঘন লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজের ব্যাপারে জানতে চাইলে আবাসিক প্রকৌশলী বলেন, বিলাইছড়ি জুরাইছড়ি ও বরকল দূর্গম উপজেলায় যে ১১কেভি বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনটি দেয়া হয়েছে তা গ্রাহকদের চাহিদার চাইতে অপ্রতুল। যার কারনে সন্ধ্যার সময় এক সাথে সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। যার কারনে ঘন ঘন লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজ হয় বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কাপ্তাইয়ের ৩৩কেভি লাইনটি নষ্ট হওয়ায় সেখানে লাইনটি সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, দূর্গম পাহাড়ী উপজেলা গুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন দেয়ায় রাস্তাঘাট না থাকায় লাইনে সমস্যা দেখা দিলেও সেসব সমস্যা যখন তখন সমাধান করা যায়না। ফলে লাইনের ক্রুটি ছাড়তে একটু সময় লাগে। তাছাড়াও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) যথেষ্ট জনবল সংকট রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনবল নিয়োগ দিলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে বলে জানান তিনি।