বৌদ্ধ পূর্ণিমায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

588

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি – বৌদ্ধ পূর্ণিমায় বাংলাদেশ ও ভারতে আইএসের হামলার হুমকির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এই হামলা মোকাবিলায় পুলিশ প্রশাসন সতর্ক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধধর্মীয় জনগোষ্ঠী ও বৌদ্ধ মন্দিরের সংখ্যা বেশী থাকায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পূর্ব সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করেছে। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পুলিশ সুপারদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির বলেন, আগামী ১৮ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে পার্বত্য রাঙ্গামাটির প্রতিটি বিহারগুলোতে সতর্কতামূলক নজরদারির পাশাপাাশি পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার যে কোন স্থানে যে কোন সময় তল্লাশির চেক পোষ্ট বসানো হবে। তিনি বলেন, কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখা হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যা যা করণীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাই করা হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সব কিছু করতে প্রস্তুত। রাঙ্গামাটির ৫শত বৌদ্ধ মন্দিরের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহা, আহমার উজ্জামান জানান, বৌদ্ধ পূর্ণিমাতে হুমকির প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব ধর্র্মীয় প্রতিষ্ঠানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকের টহল রয়েছে। ধর্মীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।

বিষয়ে এ ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, এধরনের একটা হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে আসার পর আমরা সম্ভাব্য সকল ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্যাগোডা, কিয়াং, মন্দির ও গির্জাগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করেছি। কিছু জায়গায় আমরা পেট্রোলের ব্যবস্থা করেছি। আর যেগুলো একটু কম গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোতে মোবাইল টিমের মাধ্যমে একটা নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছি। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিত, ভিক্ষু, ফাদারদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এসব বৈঠকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য কিছু পরামর্শ প্রদান করেছি। আমাদের মোবাইল নম্বরগুলো তাদেরকে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন থানা থেকে কোনো না কোন অফিসার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিজিট করছেন। যারা সন্ত্রাসী হামলা করতে পারে তারা কোন কোন ছদ্মবেশে আসতে পারে সে বিষয়ে তাদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। ভান্তেদের ছদ্মবেশে, ফাদারদের ছদ্মবেশে, গর্ভবতী মহিলাদের ছদ্মবেশে, বিভিন্নভাবে তারা আসতে পারে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করা হয়েছে। তারাও নিজস্ব চেকিং ব্যবস্থা চালু করেছে এবং আমরাও বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত চেক পোষ্ট করছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গে এই সতর্কতার কথা জানিয়েছেন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। বৌদ্ধ পূর্ণিমাতে এই সম্ভাব্য হামলা চালাতে পারে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে সংগঠন বলে উল্লেখ করা হয়।

বুদ্ধ পুর্ণিমায় হামলার আশংকা পাশাপাশি আইবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু বা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হতে পারে। শুক্রবার এই সতর্ক বার্তা পশ্চিম বঙ্গ সরকার জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গত মাসে ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার পর পশ্চিমবঙ্গে সতর্কতামূলক পদেক্ষপ নেওয়া হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।