চাকুরী দেয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, মামলা দায়ের

641

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি – চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে রাঙ্গামাটির শহরের বেকার যুবক ও যুব মহিলার কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুমী আলম ও মোঃ জসিম উদ্দিন দম্পতীর বিরুদ্ধে। প্রতারকচক্রটির মধ্যে আম্বীয়া খাতুন প্রকাশ সুমী এবং তার স্বামী মোঃ জসিম উদ্দিন এসব প্রতরণা করে আসছে বলে জানা গেছে। তারা রাঙ্গামাটি পৌরসভা এলাকাধীন ৭ নং ওয়ার্ডের আলমডক ইয়ার্ড এলাকায় বসবাস করছেন।

এই দম্পতি একটি প্রতারক চক্র গঠন করে আম্বীয়া খাতুন প্রকাশ সুমী আলম নিজেকে একজন বি,কে,টি,টি,সি (বাংলাদেশ কোরিয়া ট্যাকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের) তিন জেলার একজন অডিট অফিসার এবং মোঃ জসিম উদ্দিন উক্ত মহিলা অফিসারের কথিত পিওন পরিচয় দানকারী হিসেবে সাধারন মানুষকে চাকরী দেয়ার নামে বিভিন্ন প্রলোভন দেখানোর কাজে জড়িত।

দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই দম্পতি বাংলাদেশ কোরিয়া ট্যাকনিক্যাল টেনিং সেন্টারে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। সাধারন মানুষকে ঠকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রাঙ্গামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। বর্তমানে এ দম্পতি পলাতক বলে জানা গেছে।

চাকরী পাওয়ার আশায় সুমী ও জসীম দম্পতির কাছে এরকম প্রতারণার স্বীকার দিলীপ নন্দী। দীলিপ নন্দী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনিসহ তার আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে নেয়া প্রায় ২২ লক্ষ টাকার চাকরীর আশায় ঐ দম্পতিকে দেন দীলিপ নন্দী। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে ও দীলিপ নন্দী ও তার আত্মীয়দের কারো চাকরীর ব্যবস্থা না হওয়াতে, তারা বুঝতে পারে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। দীলিপ নন্দী জানান, তাদের এ টাকাগুলো উদ্ধার করার জন্য তারা সুমী ও জসীম দম্পতির বাসায় অনেকবার গেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলেছেন। কিন্তু উপায়ান্তর না দেখে তারা এখন আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।

দীলিপ নন্দী টাকা উদ্ধার করতে না পেরে গত ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ইং তারিখে রাঙ্গামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৪৮/১৯ ধারা ৪০৬/৪২০/৩৪ দঃ বিধিতে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি এজাহার হিসাবে গন্য করার জন্য অফিসার ইনচার্জ কোতয়ালীকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে সুমী আলম এর ব্যক্তিগত মোবাইল ০১৬২৫০৪৩৭৮৩ নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেয়নি। ভূক্তভোগীরা জানান, বর্তমানে উক্ত দম্পতি তাদের অন্যতম সহযোগীর ঘরে আত্মগোপন করে আছে।

শুধু দীলিপ নন্দীগং নয় এরকম আরো অনেকে এ দম্পতির কাছে চাকরী পাবার প্রত্যাশায় লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন।

ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাকুরীর বিশ্বাস যোগ্যতা প্রমান করার জন্য টাকা নেয়ার কিছু দিনের মধ্যে চাকুরী হয়েছে বলে তাদেরকে ব্যাংকে একাউন্ট করতে বলে। একাউন্টের মাধ্যমে তারা কয়েক মাস বেতন পায়। এই করে করে যাদেরকে বেতন দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে আরো অন্যান্য বেকার যুবক ও যুব মহিলাকে চাকুরীর দেয়ার প্রলোভন দেখায়।

অপর একজন ভূক্তভোগী জানান, তাদেরকে তিন জনের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে তাদেরকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তাদেরকে কোন ইন্টারভিউতে ডাকছে না। এই নিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন টাকা দিয়েছি কোন ইন্টারভিউ লাগবে না। চাকুরী এমনিতেই হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। পরে তারা যোগাযোগ করতে চাইলে তারা কোন খোঁজ পায়নি এই দম্পতির।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সুকৌশলে প্রচার করে এবং পর্যন্ত সরকারী চাকুরী দিবে বলে বিভিন্ন লোকজন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনুসন্ধান কালে জানা যাই, আম্বিয়া খাতুন ও তার স্বামী জসিম উদ্দিন এবং তাহার সৃষ্ট্য প্রতারক চক্র বি,কে,টি,টি,সি (বাংলাদেশ কোরিয়া ট্যাকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের) তে ইষ্টিমেটর পদে চাকুরী দেয়ার কথা বলে রাঙ্গামাটি জজ কোর্ট সংলগ্ন রাঙাশ্রী কমিউনিটি সেন্টার এর পরিচালক

এ দম্পতি চাকরী দেয়ার কথা বলে দীলিপ নন্দীগংয়ের নিকট থেকে নগদ ২১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,গর্জনতলীস্থ স্বপন বড়–য়ার ছেলে রমেন বড়–য়া থেকে নগদ ৮ লক্ষ টাকা, রিজার্ভ বাজারস্থ, মহসিন কলোনীর মৃতঃ মোঃ মুছা কোম্পানীর ছেলে মোজাম্মেলন হক (রাজু)র কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা, রিজার্ভ বাজার স্থ পুরাতনবস্তী ডাক পোষ্ট কর্মরত আব্দুল ওদুদের শালার কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা, গীতাশ্রম কলোনীর প্রয়াত বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ মিন্টু শীলের ২ ছেলে ও ১ মেয়ের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা, কাপ্তাই থানাধীণ জাহানারা বেগম এর কাছ থেকে ৭ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা গর্জনতলীস্থ হাজারা খাতুন থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ভেদভেদীস্থ এম হাসেম ভান্ডারীর মেয়ের জামাইকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ৮ লক্ষ টাকা, একই এলকাার এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা সহ মোট ৭০ লক্ষ টাকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো অনেক ভ’ক্ত ভোগী তার খপ্পরে পড়ে সর্বশ্র হারিয়ে তার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অসংখ্য সম্ভ্রান্ত পরিবার টাকা দেয়ার কথা বললেও লজ্জায় মুখ খুলতে পারছে না।

রাঙ্গামাটি শহরের সাধারন মানুষকে চাকরী দেয়ার নামে সুমী ও জসীম দম্পতির এসব আত্মসাৎ করা কোটি টাকা উদ্ধারে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সহ পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।