দীপংকর তালুকদার মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়

1580

স্টাফ রির্পোটার: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়দের গত ৩ জানুয়ারী শপথ গ্রহনের পর আজ রবিবার বিকাল ৫টায় নতুন মন্ত্রীসভায় কারা সদস্য হিসেবে থাকছেন তা নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রীর নাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে না ঘোষণা করনে।

এবারের মন্ত্রিসভায় ৩১ নতুন মুখের ঠাঁই হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জন প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার সদস্য হতে যাচ্ছেন। বাকি চারজন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৮ সালের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

অন্যদিকে পুরনো হেভিওয়েট নেতাদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। যার মধ্যে রয়েছেন, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার। যিনি এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্বত্য তিনটি আসন থেকে সাধারণত দেয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কপালে জুটছে মন্ত্রীত্ব পাওয়ায় তালিকায় থাকা দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর ঊশৈসিং, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মধ্যে বীর বাহাদুরের।

তবে মন্ত্রিসভার সদস্য না হতে পারায় দীপংকর তালুকদার ও নেতা-কর্মীরা একেবারে হতাশ নয় বলে জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষ নেতা।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতাব্বর জানান, আমাদের নেতা দীপংকর তালুকদার মন্ত্রী না হওয়ার আমরা হতাশ নয় তবে এখনো আশাবাদী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা রেখেছি। দীপংকর তালুকদারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে জননেত্রীকে নৌকা উপহার দিয়েছি। আমরা এখনো আশাবাদী পরিক্ষিত নেতা দীপংকর তালুকদারকে যে কোন একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যারল চাকমা জানান, দাদা (দীপংকর তালুকদার) মন্ত্রী না পাওয়ায় আমরা কিছু হতাশ হয়েছি। তিনি অভিমান করে বলেন, রাজনীতিতে যোগ্যতার দাম নাই পার্বত্য অঞ্চলে তা আরেকবার প্রমান হলো নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠনের মাধ্যমে। এখন রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি।

রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী জানান- আমরা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিন্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। পার্বত্যাঞ্চলে রাজনীতিতে সর্ব প্রথম আওয়ামী লীগের বীজ বপন করেছিলেন দীপংকর তালুকদার। তার প্রচেষ্ঠায় এখানকার রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানসহ পার্বত্য শান্তি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া ত্বরাণি¦ত করা সম্ভব হয়েছিল। সেক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দীপংকর তালুকদারের মতো রাজনৈতিক বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যথেষ্ঠ মূল্যায়ন করবে বলে আমাবাদী তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন জানান, দাদা মন্ত্রীত্ব পাওয়া কিছুটা আমরা হতাশ হলেও মনোবল ভাঙ্গেনি। রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদারের রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে জয়ের পর নতুন সরকারে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে দীপংকর তালুকদারই একটি সম্মানজনক অবস্থান পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।

দীপংকর তালুকদারকে মন্ত্রীত্ব না দেওয়ায় সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়:

স্থানীয় সাংবাদিক শংকর হোড় তার ফেইজবুকের স্টেটাসে লিখেছেন, দাদা দীপংকর, আপনার জীবনে সবচে বড় ভুল ছিলো ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে আপনি মাথা ঘামাননি, তাতে আপনার পরাজয়, কিন্তু পরাজয়ের পরও আপনি পাহাড়ের চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, একের পর এক পাহাড়ি আওয়ামীলীগারদের ওপর হামলার পরও আপনি শান্তির কথা চিন্তা করে পাল্টা অ্যাকশনে যাননি, এসব ঘটনায় বড় কোনও নেতার বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি, আপনার সবচে বড় ভুল আঞ্চলিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতার পরও মেডিকেল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এগিয়ে গেছেন। মন্ত্রী, এমপি না হয়েও ১০ উপজেলা চষে বেড়ালেন। মজবুত করেছেন দলীয় অবস্থান। আঞ্চলিক চারটি সংগঠনকে কৌশলে মোকাবেলা করেছেন। জনসংহতি সমিতির স্বর্গভূমিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নির্বাচনে জয়লাভ। আর এসবের ফলাফল শূন্য। আর যাকে এসবের মোকাবেলাই করতেই হয়নি। আর গত পাঁচ বছরে যার কারণে অন্য দুই জেলা উন্নয়বঞ্চিত হয়েছে, তাকেই দিলো প্রমোশন!!!!! এরই নাম রাজনীতি!!!!!

অতত্রব, যে বনে বাঘ নেই, সে বনে বিড়ালই বাঘ। আর তার গলায় সোনার হার উঠবে, এটাই স্বাভাবিক….যাক দীপংকর দা, আপনি গত পাঁচ বছর যেভাবে তৃণমূলের নেতা ছিলেন, সেভাবেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকুন। মন্ত্রণালয়ই শেষ কথা নয়। জনমানুষের নেতা হয়ে থাকুন।

অন্যদিকে দিকে রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফেবুতে লিখেছেন, দীপংকর তালুকদার (দাদা) তো হারেনি, হেরে গেছে সততা।

রাঙামাটি যুবলীগ নেতা মোঃ আলী লিখেছেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই কর্মীদের রক্ত ও নিরলশ নৌকার বিজয়ী করণে জননেত্রীর উপহারটুকু পাওয়ার অপেক্ষা গ্রহণ করতে হবে ধোর্য্যতার মাধ্যমে… কারন নেত্রীর চোখে কর্মীদের মূল্যায়ন অপেক্ষনীয় এবং শ্রষ্ঠানীয়।

রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র চক্রবর্তী স্নেহাশিস তার ফেইজবুকে লিখেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একজন নেতা-ই অবিসংবাদিত নেতা, অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক, পাহাড়ের অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার বজ্রকণ্ঠ। “জননেতা” হয়ে উঠা যায় নাহ এতসহজে। কোন গুপ্ত ডিপ্লোম্যাটিক অবস্থান উনি দেখাননি বা এমন কোন পথ অবলম্বন করেননি। স্বচ্ছ অবস্থান নিয়েই চষে বেড়িয়েছেন একদম তৃণমূলের প্রতিটি স্তরে।

একজন কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও তৃণমূলের সকলের কাছে উনি যে আধরষধনরষরঃু র দৃষ্টান্ত রেখেছেন সেটা অনেকাংশে বিরল। হ্যাঁ বলছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন জননেতা দীপংকর তালুকদারের কথা। আমাদের দাদা’র কথা। যে মামুষটিই একবার উনার দ্বারে গিয়েছে সে কখনো ফিরেনি বিমুখ হয়ে, পেয়েছে অভয়। এসব কাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেকেই জানে, তাই বাহুল্যতায় আর না গেলাম।

অঞ্চলপ্রীতির উন্নয়নের উর্ধ্বে ছিলেন এই মানুষটা। উনার প্রতিটি উন্নয়ন কখনোই বিলাসিতার খোড়ক ছিলোনা, ছিলো জন-মানুষের পালস বুঝে বুঝে।

উনার প্রতিটি কাজের মধ্যেই ছিলো অনাগত প্রজন্মের জন্য করে দেয়া সুসংহত রোডম্যাপ আর অবকাঠামো। আমি সৌভাগ্যবান আমি তৃণমূলের সংগ্রামী একা লড়াই করে যাওয়া এই দীপংকর তালুকদারের এলাকার ছেলে!

আমি সৌভাগ্যবান যে আমি উনার মতো এতো পরিষ্কার অবস্থানের হাস্যোজ্জ্বল একজন নেতার স্নেহডোরে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছি। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনের সময় যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাকে “রাজা” বলে ডেকেছিলেন, তার যৌক্তিকতা কিছুদিন পর থেকেই আরো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। এটা হলফ করে বলতে পারি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক নেতা আসবে যাবে কিন্তু দীপংকর তালুকদারের মতো তৃণমূলের লড়াকু, জনমানুষের নেতা আর আসবে নাহ। “দাদা”র তুলনা ” দাদা” ই!!

এই ধরনের শতশত স্টেটাস এ ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।