পাহাড়ে সম্ভাবনাময় মাল্টা

1165

নিজস্ব প্রতিবেদক – রাঙ্গামাটিতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশীয় মাল্টার চাষ। রাঙ্গামাটির শুকরছড়ি গ্রামের পাহাড়ি জমিতে দেশী বারি মাল্টা -১ এর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষি হেমকুমার চাকমা। নিজের ১ একর জমিতে বারী মাল্টার চাষ করে তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল বাগান। এবছর সুমিষ্ট মাল্টার ফলনও এসেছে প্রচুর। তার সফলতা দেখে অন্যান্যরাও মাল্টার চাষ শুরু করেছে। রাঙ্গামাটির পাহাড়ের উদ্যানে গড়ে উঠছে মাল্টার বাগান। ২০১৪ সালে চাষী হেম কুমার চাকমা হাতে নিয়েছিলেন দেশীয় উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ এর ব্যতিক্রমধর্মী এই ফলজ বাগান গড়ে তোলার কাজ। মাল্টা চাষে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
পাহাড়ি মাটিতে ফলজ বাগানে দেশি মাল্টা গাছে সুমিষ্ট ও রসালো জাতের মাল্টা উৎপাদন করে হতবাক করেছেন তিনি। একই বাগানে মাল্টার পাশাপশি বাউকূল উৎপাদন করা এখন তার নতুন স্বপ্ন।
হেম কুমার চাকমা বলেন, কৃষি বিভাগ যখন বারী মাল্টা-১ এর চারা গুলো দিলো তা দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই গড়ে তুলেছেন এই ফলজ বাগান। পাহাড়ের এই উঁচু মাটি। তিনি লাগিয়েছিলেন স্থানীয় জাতের বেশ কিছু মাল্টার চারা।
হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তারা মাল্টা চাষে উৎসাহ যোগাতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ‘বারি মাল্টা-১’ চাষের প্রস্তাব দিলে হেম কুমারের মনে জেগে উঠে সেই সুপ্ত বাসনা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রথমে ২ শ চারা এনে রোপন করেন তার জমিতে। ‘একদিন সুস্বাদু মাল্টা হবেই’ এমন বাসনা নিয়ে শুরু হয় রোপন করা মাল্টার চারার সেবা যতœ। স্ত্রীকে নিয়ে নিবিরভাবে বাগান পরিচর্যায় মাত্র আড়াই বছরের মাথায় সাফল্য ধরা দেয় হেমকুমারের হাতে। মাত্র আড়াই বছরের মাথাই মাল্টার আবাদে সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেন বলে জানান এই কৃষক। এ বছরও বাগানজুড়ে এখন থোকায় থোকায় সুমিষ্ঠ দেশীয় মাল্টা।
শুকুরছড়ি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা বলেন, মাল্টা চারা সরকারিভাবে সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। জাতগুলো চাষি তার নিজস্ব উদ্যোগেই গ্রহণ করেছেন। এই ফলজ বাগানকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থাকবে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গামাটি কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, দেশে মাল্টা অন্যতম জনপ্রিয় ফল। কিন্তু চাহিদার পুরোটাই আমদানী নিভর্র। তবে দেশের রাঙ্গামাটির পাহাড়ে থেকে এসেছে মাল্টা আবাদের সুখবর।
মাটি ও আবহাওয়ার কারণে সুস্বাদু ও রসালো মাল্টার বিপ্লব ঘটেছে। পরীক্ষামূলক আবাদেই বাম্পার ফলন এ অঞ্চলে মাল্টার আবাদ নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। পুষ্টি চাহিদার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। ২০১৩ সালে আবাদ, ২০১৬ সালেই সফলতা। এমন ফলাফলের প্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটির অঞ্চলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে আবাদের সম্প্রসারণ দেখে মনে হচ্ছে, একদিন দেশের ফল রপ্তানীতেও যুক্ত হবে পাহাড়ের মাল্টা।
তিনি বলেন,রাঙ্গামাটিতে মাল্টার চাষে যে রকম সাড়া পড়েছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যেই তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মাল্টা চাষ পাহাড়ে একটি বিল্পব আনবে। এবং তা সারা দেশে সাড়া জাগাবে। বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি কৃষকরা লাভবান হবেন হবে বলে জানান তিনি।