নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মান্না সারাজীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভালো লিখলো। আওয়ামী লীগে ফেরার পর বললাম, এবার আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু লিখো। লিখলো না। মান্না, ভালো লিখতে বললেই জুড়ে দেয় কান্না’।
প্রধানমন্ত্রী তার নেপাল সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন। রোববার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘নির্বাচন আদৌ হবে কি না’ ড. কামাল হোসেনের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, রাজনীতির মাঠে ভালো দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসুক। ভালো বিকল্প থাকা উচিত। কিন্তু তারা তো (ড. কামাল) ভিন্ন কৌশলে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিছু লোকই থাকেন, যারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়।
ড. কামাল সাহেবরা আদৌ নির্বাচন চান কি না এমন সন্দেহ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড. কামাল গং, যারা একসঙ্গে হয়েছে তারা আদৌ নির্বাচন চায় কি না? কারণ বাংলাদেশে একটা শ্রেণি বসেই থাকে একটা অনির্বাচিত কিছু আসলে, তারা একটা ফ্ল্যাগ পায়। ড. কামাল হোসেনও আনকনটেস্টে জিতে এসেছিলেন। জাতির পিতা একটা আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেই সিটে কেউ কনটেস্ট করে নাই। উনি (ড. কামাল হোসেন) এমপি হয়ে আসলেন। সেই আনকনটেস্টের যিনি এমপি, তিনি আনকনটেস্ট মানতে চান না। নিজেকে আবার সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন, এখন আবার সেই সংবিধানও তিনি মানতে চান না।’
ড. কামালের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, তিনি (ড. কামাল) বিশেষ আন্দোলনের কথা বললে বুঝতে হবে তিনি পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিকল্প ধারা এখন স্বকল্প ধারা। অথচ তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল।
একই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সময়ে নীরব, অসময়ে সরব, তার নাম আ স ম বর।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সব মিলিয়ে একটা জোট করেছে, এটা ভালো। বাংলাদেশে তো দুটি দল, একটা আওয়ামী লীগ, আরেকটা আওয়ামী লীগ বিরোধী। আওয়ামী লীগ বিরোধীদের তো একটা জায়গা থাকা দরকার। ড. কামাল হোসেন সাহেবের পকেটে সবসময় একটা টিটিট থাকে, উনি যখন একটা গরম বক্তৃতা করেন তখন ওনার প্লেন (বিমান) রেডি থাকে।’
তিনি বলেন, ‘অন্ততপক্ষে একটা ভালো জোট হোক, আমরা নির্বাচনটা কনটেস্ট করি। একটা তো বিকল্প থাকতে হবে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা করলেন, সেটা এখন স্বকল্প হয়ে গেছে। আমাদের তো কোনো কিছু হলে সব উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তো মৃত্যুর মুখে আছি, সবসময়। একটু আন্দোলন দেখলেই সেটার ঘাড়ে চড়ে সবাই বসতে চায়। যখন আন্দোলন হয় তখন আমি দেখি। তারপর সেই আন্দোলনের ঘাড়ে যদি কেউ চড়ে, তাকে সরিয়ে দেই। তারাও পড়ে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, সেই আন্দোলন করে যদি কেউ সফল হয় আর যদি উত্তরপাড়া থেকে কেউ আসে- সেটাই তো উনারা চান। সুষ্ঠুভাবে গণতন্ত্র তো তারা চান না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশে হবে, নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারোর নেই।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারে বসাবো, বসলে তো চেয়ার ছাড়ে না।
‘বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না। বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর আমি তার বাসায় গেলাম। আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। ওইদিন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হতে পারে না,’- বলেন তিনি
খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে বিএনপির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এতিমদের টাকা চুরির দায়ে। দুর্নীতির মামলায় তিনি কারাগারে। ওনারই পছন্দের ফখরুদ্দিন, মইনউদ্দিনের সময় মামলা দেয়া হয়েছে। দশ বছর ধরে এই মামলা চলেছে। ১৫৪ দিন ধার্য করা হয়েছে। তারা চুরি করলে অনেকেই তাদের পক্ষে। আর আমাদের বেলায় পান থেকে চুন খসলে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্টের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর দ্রুত মুক্তি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের ব্যাপার। এটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা জোর করে কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই না।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানে বিধান সংরক্ষিত আছে। আমরা বহু অভিজ্ঞতা নিয়েছি। মার্শাল ল’ দেখলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখলাম। কারে বসাবো, বসলে তো চেয়ার ছাড়ে না। আমরা আর অনির্বাচিত সরকারের হস্তেক্ষেপ দেখতে চাই না।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা নিয়ে বলতে চাই, আমাদের দেশেও এই ধরনের ছবি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। এখন কথাটা হচ্ছে, শিখলো কার কাছ থেকে এরা? আমাদের বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে এগুলো শিখলো কি-না তারা? বিভিন্নভাবে জামায়াত-বিএনপিও কিন্তু এ ধরনের প্রচার চালিয়েছিল। মিয়ানমার যেটা করেছে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছে।
গত ৩১ আগস্ট গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার ছবিকেই মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দ্বারা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী নিধনের ছবি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইটি জুলাই মাসে প্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটিকে দেয়া বাংলাদেশের তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার লোককে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের যিনি প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তাদের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী তাদের ৩ হাজার লোকের একটা তালিকা দেয়া হয়েছে, যারা ফিরে যেতে চান। তিনি (মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট) তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে আমাকে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণত যখন এই ধরনের (বিমসটেক) একটা আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরি হয়, তখন সেখানে এ ধরনের দ্বি-পাক্ষিক বিষয়গুলো সেখানে তুলে ধরা যায় না। এতে পরিবেশটা ভালো থাকে। আমরা বঙ্গপোসগারকে ঘিরে যে দেশগুলো সে দেশগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা ও দেশগুলোর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। সার্বিক বিবেচনায় বিমসটেকের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। তারা বলে, কিন্তু করতে পারে না। কারণ, করতে গেলে অনেক বাধা আসে। Sours- jagonews24.com